আল্লাহ্‌র পরীক্ষা - মুমিনের ঈমানী পরীক্ষা, বিপদ ও স্বপ্ন থেকে শক্তি।

আমার এই সাইটটি মূলত স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত। কিন্তু আমি এখন মুমিনদের উপর আল্লাহ্‌র পরীক্ষা সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি লিখছি কেন? এর কারণ হলো—আমার জীবনে আল্লাহ প্রেরিত প্রথম পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক বছর আগে আমি একটি স্বপ্ন দেখি। এরপর দীর্ঘ সাত বছর আমার পরীক্ষা চলে, আর সেই সাত বছর আমার স্বপ্ন আমাকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে।

এর আগে আমি আমার প্রথম স্বপ্ন নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছি। সেই আর্টিকেলের প্রেক্ষিতেই এই আর্টিকেলটি লিখছি, কেবল স্বপ্নের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। যদি আপনি আমার আগের আর্টিকেলটি না পড়ে থাকেন, তবে পড়ে আসতে পারেন— “আমার প্রথম স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা”।

মুমিনের ঈমানী পরীক্ষা কীভাবে হয়।

যখন একজন মুমিন মন থেকে নিজেকে উপলব্ধি করে—ইমান, পরহেজগারিতা, আল্লাহ্‌র ভালোবাসা, ইমানের সাধনা, আল্লাহভীতি এবং কুরআনের প্রতি আকর্ষণ—তখন তার জীবন হয়ে ওঠে শান্ত ও আনন্দময়। ঠিক এর পরেই শুরু হয় আল্লাহ্‌র পরীক্ষা। এরপর যা কিছু ঘটবে, সবই হবে তার ধারণার বাইরে। আর এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সকল নবী, রাসূল ও মুমিনদের অতিক্রম করতেই হয়েছে।

এই বিষয়ে কুরআনে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে—

“মানুষ কি মনে করে যে, তারা ইমান এনেছে বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অবশ্যই আমি তাদের আগে যারা ছিল তাদেরকে পরীক্ষা করেছি, যাতে আল্লাহ প্রকাশ করে দেন কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী।”

(সূরা আল-আনকাবুত ২৯:২-৩)

আমার পরীক্ষার পটভূমি।

আমি তখন নিজেকে মনে করতাম একজন ইমানদার, পরহেজগার ও আল্লাহভীরু মানুষ। ঠিক সেই সময়েই আমি প্রথম একটি স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন দেখার পর আমার মন আরও বেশি ইমানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আজ থেকে প্রায় আট বছর আগের কথা। সত্যি বলতে, সেই সময়কার ইমানের অনুভূতি আজও আমার ভেতরে জীবন্ত। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি—তিনি যেন আমাকে তখনকার সেই মিষ্টি ইমানের অনুভূতির থেকেও আরও বেশি ইমান দান করেন।

প্রথম স্বপ্ন দেখার প্রায় ছয় মাস পরের ঘটনা। এক রাতে হঠাৎ বাবা দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন— “ইমরান, ওঠ! বাইরে আয়।”

তাড়াহুড়া করে দরজা খুলতেই দেখি বাবা পেটের তীব্র ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তখন আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র চার–পাঁচ মাস, তখন আমার স্ত্রী গর্ভবতী। ভয় আর দুশ্চিন্তায় আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গেলাম। ডাক্তার দুটি ইনজেকশন দিলেন, আর কিছুক্ষণ পর বাবা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেন। আমরা বাড়ি ফিরে এলাম।

কিন্তু এর কিছুদিন পর আবার বাবার শরীরে সমস্যা দেখা দিল। রক্ত অনেক কমে যায়, যার কারণে এক ইউনিট রক্ত দিতে হয়। বাবার রক্তের গ্রুপ ছিল O নেগেটিভ—যা পাওয়া কঠিন ছিল। সেদিনও আল্লাহর রহমতে সবকিছু ঠিকঠাক হলো।

এরপর থেকে বাবার অসুস্থতা প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়াল। আমি বাবাকে নিয়ে কলকাতার SSKM হাসপাতালে গেলাম। আমার জীবনে এটাই ছিল প্রথমবার কলকাতার সেই হাসপাতালে যাওয়া। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার কিছু ওষুধ দিলেন। সেই ওষুধ খেয়ে বাবা আবার সুস্থ হলেন।

তবুও রোগটি ধরা যাচ্ছিল না। ডাক্তার পরে কোলনোস্কপি পরীক্ষার জন্য বললেন। আমরা ঠিক করলাম নির্ধারিত দিনে কলকাতা যাব। কিন্তু যাওয়ার আগের দিনই হঠাৎ NRC-কে কেন্দ্র করে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ড ঘটল। ফলে আমরা যেতে পারলাম না, পরীক্ষাটিও আর করা হলো না।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো—এরপর বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন। তাই আমরা আর কোলনোস্কপি করার প্রয়োজন বোধ করিনি। কিছুদিনের মধ্যেই আমার ঘরে এক পুত্রসন্তান জন্ম নিল। আমি তার নাম আমাদের প্রিয় নবীর নামে রাখলাম—আহাম্মাদ আলি। ঘরে নতুন প্রাণ আসায় আমাদের পরিবার আনন্দে ভরে উঠল। আর আমার অন্তরও ইমানের স্রোতে প্রতিনিয়ত ভেসে যাচ্ছিল।

এসব ঘটনাই ছিল আমার পরীক্ষার ভূমিকা বা পটভূমি। আল্লাহর আসল পরীক্ষা তখনও শুরু হয়নি। এগুলো কেবল ছিল সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি। আর্টিকেলটি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, তাই এখানেই থামছি। পরবর্তী অংশে আমি আমার মূল পরীক্ষার গল্প শুরু করব।