স্বপ্ন নিয়ে ইসলাম কী বলে - কুরআন ও সহিহ হাদিস।

স্বপ্ন ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বপ্নের গুরুত্ব ও বিশেষত্ব কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনের মধ্যে ৫টি স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে। আবার হাদিসের মধ্যে স্বপ্ন বিষয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায়, স্বপ্ন নিয়ে ইসলামে অনেক আলোচনা হয়েছে।

স্বপ্ন নিয়ে ইসলাম কী বলে – সরাসরি কুরআন থেকে।

কুরআনের মধ্যে স্বপ্নের কথা উল্লেখ হয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২টি আয়াতে। এর মধ্যে কিছু স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

ইব্রাহিম (আঃ) এর স্বপ্ন।

অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার উপযুক্ত বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ, তোমার কী মত?’ সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ [সূরা আস-সাফফাত ৩৭:১০২]

ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা।

যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, ‘হে আমার পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদ; আমি দেখেছি, তারা আমার প্রতি সিজদাবনত।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪]

আর সে তার পিতামাতাকে রাজাসনে উঠাল এবং তারা সবাই তার সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। সে বলল, ‘হে আমার পিতা, এই হলো আমার পূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার রব তা বাস্তবে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন এবং আপনাদেরকে মরুভূমি থেকে এনেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার পর। নিঃসন্দেহে আমার রব যা ইচ্ছা করেন, তা বাস্তবায়নে তিনি সূক্ষ্মদর্শী। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা ইউসুফ ১২:১০০]

দু’জন যুবকের স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা।

আর কারাগারে তার সাথে প্রবেশ করল দুই যুবক। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি মদ নিংড়াচ্ছি।’ আর অপরজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি আমার মাথার উপর রুটি বহন করছি, তা থেকে পাখি খাচ্ছে। আপনি আমাদের এর ব্যাখ্যা বলুন, নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৩৬]

ইউসুফ (আঃ) বললেন, ‘হে আমার কারাসঙ্গী দুইজন, তোমাদের একজন তার মনিবকে মদপান করাবে, আর অপরজনকে শূলে চড়ানো হবে, অতঃপর পাখি তার মাথা থেকে আহার করবে। এই বিষয়ে যা জানতে চেয়েছ, তা নির্ধারিত হয়ে গেছে।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪১]

বাদশাহর স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা।

বাদশাহ বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখছি সাতটি মোটা গাভী, যেগুলোকে খেয়ে ফেলছে সাতটি রোগা গাভী; এবং আমি দেখছি সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুকনো শীষ। হে সভাসদগণ! যদি তোমরা স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে পারো, তাহলে আমাকে এর ব্যাখ্যা দাও।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪৩]

ইউসুফ (আঃ) বললেন, ‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষাবাদ করবে। এরপর তোমরা যে শস্য কেটে ঘরে তুলবে, তার মধ্যে যা খাবে তা বাদে বাকিগুলো শীষে রেখে দেবে।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪৭]

‘তারপর আসবে সাতটি কঠিন বছর, তখন তোমরা যা সঞ্চয় করেছিলে, তা খরচ হবে—সামান্য কিছু বাদে যা সংরক্ষণ করে রেখেছিলে।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪৮]

‘এরপর আসবে একটি বছর, যাতে মানুষ প্রচুর বৃষ্টিপাত পাবে এবং তারা ফল ও যয়তুনের রস নিংড়াবে।’ [সূরা ইউসুফ ১২:৪৯]

আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বপ্নের ব্যাখ্যার জ্ঞান।

আর এভাবেই তোমার রব তোমাকে মনোনীত করবেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার জ্ঞান শিক্ষা দেবেন। তিনি তোমার ও ইয়াকূব পরিবারের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন, যেমন তিনি পূর্ণ করেছিলেন তোমার পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম ও ইসহাকের প্রতি। নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [সূরা ইউসুফ ১২:৬]

আপনার স্বপ্ন পাঠান - আমরা ব্যাখ্যা করে জানবো।

স্বপ্ন নিয়ে ইসলাম কী বলে – সহিহ হাদিস থেকে।

হাদিসের মধ্যে স্বপ্ন সম্পর্কে অনেক আলোচনা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিচে দেওয়া হলো, যা জানা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়:

স্বপ্নের তিন প্রকার।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

  1. ভালো স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ।
  2. দুঃখজনক স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।
  3. এমন স্বপ্ন, যা মানুষ নিজের মনের কল্পনা।

সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬৩

সৎ স্বপ্ন নবুওতের অংশ।

“সৎ স্বপ্ন নবুওতের ৪৬ অংশের একটি।” সহিহ বুখারি: ৬৯৮৯, সহিহ মুসলিম: ২২৬৩

ভাল স্বপ্ন ও খারাপ স্বপ্নের করণীয়।

“ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি খারাপ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে, আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চায় এবং সেই স্বপ্ন কাউকে না বলে। তাহলে তা তার কোনো ক্ষতি করবে না।” সহিহ বুখারি: ৩২৯২, সহিহ মুসলিম: ২২৬১

অপছন্দনীয় স্বপ্নের করণীয়।

“যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে, সে যেন তা কাউকে না বলে এবং উঠে গিয়ে নামাজ পড়ে।” সহিহ মুসলিম: ২২৬১

শেষ যুগে স্বপ্ন সত্য হবে।

“শেষ যুগে মুমিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না; মুমিনের স্বপ্নই হবে সবচেয়ে বেশি সত্য।” তিরমিজি: ২২৭২

ফজরের পর স্বপ্ন ব্যাখ্যার প্রমাণ।

সমুরাহ ইবন জুনদুব (রাঃ) বলেন: “নবী করীম ﷺ যখন ফজরের নামাজ আদায় করতেন, তখন সাহাবিদের দিকে মুখ করে বলতেন: ‘তোমাদের মধ্যে গত রাতে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি?’” সহিহ বুখারী: ৭০১৭, সহিহ মুসলিম: ২২৬৯

তারপর সাহাবারা তাদের স্বপ্ন বলতেন, এবং রাসূল ﷺ সেগুলোর ব্যাখ্যা দিতেন।

ইসলামে স্বপ্ন থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?

ইসলামে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন মুমিন ব্যক্তির স্বপ্নকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা অনেক সময় স্বপ্নের মাধ্যমে সুসংবাদ, সতর্কতা বা দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। দুঃখজনক বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে কাউকে বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

বিশেষ করে শেষ যুগে মুমিনদের অধিকাংশ স্বপ্ন সত্য হবে। স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলামের এই মূল্যবান শিক্ষাগুলো আমাদের জানা উচিত। 📩 আপনার স্বপ্ন পাঠান ব্যাখ্যার জন্য...